বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৭

কেশবপুরের ভরতের দেউল – যশোর


কেশবপুর উপজেলা সদর হতে ১৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোন ভদ্রানদীর তীরে গৌরিঘোনা ইউনিয়নের ভরতভায়না গ্রামে ভরতের দেউল অবস্থিত। ১২.২০ মিটার উঁচু ২৬৬ মিটার পরিধি বিশিষ্ট দেউলটিকে একটি টিলার মত দেখায়। দেউলটি গুপ্ত যুগের খ্রিষ্টীয় ২য় শতকে নির্মিত হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। ১৯২৩ সালের ১০ জানুয়ারী তদানীন্তন সরকার এটাকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেউলের খনন কাজ চালাই। এর প্রথম অংশে আকারের স্থাপনা, দ্বিতীয় অংশে একটি মঞ্চ, তৃতীয় অংশে মূল মন্দির। খননের ফলে দেউলের ভিত থেকে চূড়া পর্যন্ত ৯৪টি কক্ষ দৃষ্ট হয়। স্থাপনাটির ৪ পার্শ্বে বর্ধিত আকারে ১২পিট কক্ষ। বাকী ৮২টি কক্ষ ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। দেউলটির চূড়ায় ৪পিট কক্ষ এবং পার্শ্বে ৮টি কক্ষ রয়েছে। স্থাপনাটির গোড়ার দিকে ৪ পার্শ্বে ৩ মিটার চওড়া রাস্তা রয়েছে। খনন কালের মধ্যে পোড়া মাটির তৈরী নারীর মুখমন্ডল, দেবদেবীর নৃত্যের দৃশ্য সম্বলিত টেরাকোটার ভগ্নাংশ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের এ যাবত প্রাপ্ত টেরাকোটার মধ্যে এটি বৃহৎ আকৃতির। তাছাড়া নকসা করার ইট, মাটির ডাবর, পোড়া মাটির গহনার মূর্তি পাওয়া গেছে। এ অঞ্চলে অন্য কোন পুরকীর্তিতে এত বড় আকারের ইট ব্যবহৃত হয়নি।
স্থানীয়দের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ভরতের দেউল, ভরত রাজার দেউল নামে পরিচিত। এ প্রত্নস্থানে খ্রিস্টিয় বিশ শতকের গোড়ার দিকে ১২ দশমিক ২২ মিটার উঁচু এবং ২৬৬ মিটার পরিধি বিশিষ্ট একটি ঢিবির অস্তিত্ব ছিল। ১৮৮৯ সালে বৃটিশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপারিন্টেন্ডেন্ট কাশিনাথ দীক্ষিত এ দেউল পরিদর্শনে এসে মন্তব্য করেন যে এটি ৫০ ফুটের অধিক উঁচু এবং ব্যাস ৯০০ ফুটেরও অধিক।নির্মাণে যে ইট ব্যবহার হয়েছে এতো বড় আকারের ইট এতদঞ্চলের অন্য কোনো পুরাকীর্তিতে ব্যবহার করা হয়নি।
১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে এ দেউলের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সাত অর্থ বছরের বরাদ্দ পেয়ে এ দেউলে খননের কাজ চালায়। খননের ফলে দেউলটির পূর্ণ অবয়ব মানুষের দৃষ্টিতে আসে।
খননে সমগ্র প্রাসাদটির ভিত থেকে শেষ পর্যন্ত মোট ৯৪টি কক্ষ পাওয়া যায়। চারপাশে ৪টি উইং ওয়াল। এর মধ্যে ১২টি কক্ষ। বাকি ৮২টি কক্ষের সমন্বয়ে এ বৌদ্ধ স্ত‍ুপটি তৈরি। স্তুপটির চূড়ায় ৪টি কক্ষ। এ কক্ষের দু’পাশে আরও ৮টি ছোট ছোট কক্ষ রয়েছে। অধিকাংশ কক্ষগুলো মাটি দ্বারা পরিপূর্ণ।

কীভাবে যাবেনঃ

ভরতের দেওল দেখতে হলে আপনি যেখানে থাকেন না কেন, আপনাকে প্রথমে খুলনার জেলার চুকনগরে আসতে হবে। সেখান থেকে ভ্যান, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান অথবা মোটরসাইকেলে করে আপনাকে ভরত ভায়না নামক স্থানে যেতে হবে।
সেখানে যাওয়ার পর যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলে দেবে ভরতের দেউল কোথায়। সৌন্দর্যের দিক থেকে কোনো কমতি নেই স্থাপনাটির।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ-যশোর


বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদরের চন্ডীকপুরস্থ মহেষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ৷ বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ এবং মা জেন্নাতুন্নেসা ৷ বাবা কৃষক ছিলেন ৷ জমিজিরাত যা ছিল তার উৎপন্ন ফসলেই চলে যেত সংসার৷ নূর মোহাম্মদ একমাত্র সন্তান হিসেবে পিতা-মাতার আদর-আহ্লাদে বড় হতে থাকলেন ৷ অতি আদর-যত্নের ফলে বুদ্ধি ও মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নূর মোহাম্মদের লেখা পড়া বেশিদূর এগোল না৷ গান-বাজনা, যাত্রা-থিয়েটারের মতো সাংস্কৃতিক কার্যকলাপেই তাঁর মন ছিল বেশি৷ খেলাধুলায়ও ছিলেন বেশ ভালো৷ দুরন্ত আর সাহসী হিসেবে গ্রামে নামও ছিল তাঁর৷ বাবা-মায়ের অগাধ ভালোবাসায় এভাবেই কাটছিল তাঁর বেড়ে ওঠার দিনগুলো ৷
কিন্তু কিশোর জীবনেই অনাথ হলেন নূর মোহাম্মদ শেখ৷ বাবা-মাকে হারিয়ে অকুলপাথারে ভেসে গেলেন তিনি৷ কী করবেন আর কী করবেন না ঠিক কিছুই বুঝতে পারছিলেন না৷ আশপাশে এমন কোনো অভিভাবকও ছিল না, যারা তাঁর সান্ত্বনার সঙ্গী হতে পারে৷ সমবয়সী বন্ধুরাই হয়ে উঠল তাঁর সুখ-দুঃখ-আনন্দের সাথী৷ তিনি মেতে উঠলেন গান-বাজনা নিয়ে৷ নিজের গানের গলাও ছিল ভালো৷ নূর মোহাম্মদ যাত্রাদল, জারি গান, বন্ধুবান্ধব ইত্যাদিতে টাকা খরচ করতে লাগলেন৷ কিন্তু টাকা কীভাবে আয় করতে হয় তা তিনি শেখেননি৷ তাই টাকার জন্য ধীরে ধীরে একটু একটু করে জমি বিক্রি করতে শুরু করলেন

সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ

১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে নূর মোহাম্মদ শেখ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ আমানত শেখ, মাতা জেন্নাতুন্নেসা। অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারান ফলে শৈশবেই ডানপিটে হয়ে পড়েন। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সপ্তম শ্রেণীর পর আর পড়াশোনা করেননি। নিজ গ্রামেরই সম্পন্ন কৃষক ঘরের মেয়ে তোতাল বিবিকে বিয়ে করেন। ১৯৫৯-এর ১৪ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর-এ যোগদান করেন। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই নূর মোহাম্মদকে দিনাজপুর থেকে যশোর সেক্টরে বদলি করা হয়। এরপর তিনি ল্যান্স নায়েক পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন।যুদ্ধ চলাকালীন যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা’র নেতৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।

যেভাবে শহীদ হলেনঃ

১৯৭১- এর ৫ সেপ্টেম্বর সুতিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষার সামনে যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে নূর মোহাম্মদকে অধিনায়ক করে পাঁচ জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্ট্যান্ডিং পেট্রোল পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হঠাৎ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পেট্রোলটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা থেকে পাল্টা গুলিবর্ষণ করা হয়। তবু পেট্রোলটি উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। এক সময়ে সিপাহী নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে নূর মোহাম্মদ নান্নু মিয়াকে কাঁধে তুলে নেন এবং হাতের এল.এম.জি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করলে শত্রুপক্ষ পশ্চাৎপসরণ করতে বাধ্য হয়। হঠাৎ করেই শত্রুর মর্টারের একটি গোলা এসে লাগে তাঁর ডান কাঁধে। ধরাশয়ী হওয়া মাত্র আহত নান্নু মিয়াকে বাঁচানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন। হাতের এল.এম.জি সিপাহী মোস্তফাকে দিয়ে নান্নু মিয়াকে নিয়ে যেতে বললেন এবং মোস্তফার রাইফেল চেয়ে নিলেন যতক্ষণ না তাঁরা নিরাপদ দূরুত্বে সরে যেতে সক্ষম হন ততক্ষণে ঐ রাইফেল দিয়ে শত্রুসৈন্য ঠেকিয়ে রাখবেন এবং শত্রুর মনোযোগ তাঁর দিকেই কেন্দ্রীভুত করে রাখবেন। অন্য সঙ্গীরা তাদের সাথে অনুরোধ করলেন যাওয়ার জন্যে। কিন্তু তাঁকে বহন করে নিয়ে যেতে গেলে সবাই মারা পড়বে এই আশঙ্কায় তিনি রণক্ষেত্র ত্যাগ করতে রাজি হলেন না। বাকিদের অধিনায়োকোচিত আদেশ দিলেন তাঁকে রেখে চলে যেতে। তাঁকে রেখে সন্তর্পণে সরে যেতে পারলেন বাকিরা। এদিকে সমানে গুলি ছুড়তে লাগলেন রক্তাক্ত নূর মোহাম্মদ। একদিকে পাকিস্তানী সশস্ত্রবাহিনী, সঙ্গে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্র, অন্যদিকে মাত্র অর্ধমৃত সৈনিক (ই.পি.আর.) সম্বল একটি রাইফেল ও সীমিত গুলি। এই অসম অবিশ্বাস্য যুদ্ধে তিনি শত্রুপক্ষের এমন ক্ষতিসাধন করেন যে তারা এই মৃত্যুপথযাত্রী যোদ্ধাকে বেয়নেট দিয়ে বিকৃত করে চোখ দুটো উপড়ে ফেলে। পরে প্রতিরক্ষার সৈনিকরা এসে পাশের একটি ঝাড় থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে। এই বীরসেনানীকে পরবর্তীতে যশোরের কাশিপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়।

বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭





যশোর জেলা



যশোর জেলা (খুলনা বিভাগ)  আয়তন: ২৫৭০.৪২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৮´ থেকে ২৩°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫১´ থেকে ৮৯°৩৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ঝিনাইদহ এবং মাগুরা জেলা, দক্ষিণে সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলা, পূর্বে নড়াইল ও খুলনা জেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।
জনসংখ্যা: ২৪৭১৫৫৪; পুরুষ ১২৭৭৬৫০, মহিলা ১১৯৩৯০৪। মুসলিম ২১৭০৯৭৩, হিন্দু ২৯৩৮৪১, বৌদ্ধ ৫১১১, খ্রিস্টান ৭৯ এবং অন্যান্য ১৫৫০।
নদী: ভৈরব, চিত্রা, বেতনা, কপোতাক্ষ ও মুক্তেশ্বরী।
প্রশাসন যশোর জেলা গঠিত হয় ১৭৮১ সালে। জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে মনিরামপুর উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪৪৪.৭২ বর্গ কিমি) এবং জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা অভয়নগর (২৪৭.১৯ বর্গ কিমি)
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এ্যাডভোকেট মশিউর রহমান পাকসেনাদের হাতে বন্দী হন এবং পরে তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ২৭ মার্চ পাকসেনাদের গুলিতে অভয়নগরে নওয়াপাড়া রেলস্টেশনের অফিস কক্ষে রেলওয়ের কয়েকজন স্টাফ শহীদ হন। তাছাড়াও নওয়াপাড়া আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক নজিবর রহমানসহ আরও ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। যশোর সদর উপজেলায় ২৯ মার্চ ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন ও লে. আনোয়ার এর নেতৃত্বে যশোর সেনানিবাসের বাঙালি সৈনিকরা বিদ্রোহ করে বেরিয়ে আসার সময় সংঘর্ষে প্রায় ৩০০ সৈন্য শহীদ হন। ৩০ মার্চ যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া মোড়ে মুক্তিযোদ্ধারা ৫০ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। এপ্রিল মাসে পাকবাহিনী ঝিকরগাছার কৃষ্ণপুরে অসংখ্য লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৫ সেপ্টেম্বর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নের গোয়ালহাটি গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে সংঘটিত এক যুদ্ধে শহীদ হন। বাঘারপাড়ার দোহাকুলা গ্রামে সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকারদের এক লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৮ ডিসেম্বর বাঘারপাড়া উপজেলার সেকান্দারপুর গ্রামে রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং প্রায় ৩০ জন রাজাকার নিহত হয়। মনিরামপুরের মনোহর গ্রামে পাকবাহিনী ২৩ জন  নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শার্শা উপজেলার বেনাপোল সীমান্তের পূর্বে কাগজপুকুর এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে সংঘটিত লড়াইয়ে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাছাড়া পাকবাহিনী পার্শ্ববর্তী ৩টি গ্রাম ভস্মীভূত করে দেয়। ২০ নভেম্বর চৌগাছার জগন্নাথপুর ও গরীবপুর মাঠে পাকসেনা ও যৌথ বাহিনীর (মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধা) মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হয়। এ উপজেলাকে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রবেশদ্বার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ৭ ডিসেম্বর যশোর জেলা শত্রুমুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ৫, ভাস্কর্য ২, বধ্যভূমি ১, স্মৃতিসংগ্রহশালা ১। শার্শা উপজেলায় কাশিপুর গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সমাধি।
শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৫১.২৯%; পুরুষ ৫৬.১৫%, মহিলা ৪৬.০৯%। বিশ্ববিদ্যালয় কলজ ১, মেডিকেল কলেজ ১, আইন কলেজ ১, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১, কলেজ ৭৮, পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউশন ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫১৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৫৪, মাদ্রাসা ৩৫৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মাইকেল মধুসূদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (১৯৪১), নওয়াপাড়া কলেজ (১৯৬৪), যশোর সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৫), মনিরামপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৭), সরকারি সিটি কলেজ (১৯৬৭), শহীদ মশিউর রহমান আইন কলেজ (১৯৬৮), বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), চৌগাছা কলেজ (১৯৭২), নাভারণ ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), সম্মিলনী ইন্সটিটিউট (১৮৮৯), যশোর জিলা স্কুল (১৮৩৮), পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৯৭), মুনশী মেহেরুল্লাহ একাডেমি (১৯০১), বিদ্যানন্দকাটি রাসবিহারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০১), পি বি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০৩), নেহালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৭), মশিয়াহাটি বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় (১৯২০), কুলটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয (১৯২১), মধুসূদন তারা প্রসন্ন বালিকা বিদ্যালয় (১৯২৬), শাহবাজপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৭), চৌগাছা ছারা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯২৮), চৌগাছা কলেজ (১৯৭২), সা’দাত পাইলট স্কুল (১৯২৮), চৌগাছা ছারা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯২৮), কাশিপুর সিদ্দিকিয়া আলিম মাদ্রাসা (১৯০৮), নারায়ণপুর হাইস্কুল, চৌগাছা হাইস্কুল, বাঘারপাড়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯১০), বাঘারপাড়া সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২২), সৈয়দপুর সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯২২), চৌগাছা মাদ্রাসা (১৯৪০)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: পূরবী (১৯৮৪), দেশ হিতৈশী (১৯৯১), টেলিগ্রাম (১৯৯১), যশোর (১৯৯৩), লোক সমাজ (১৯৯৬), গ্রামের কাগজ (২০০১), স্পন্দন (২০০৬), রানার (২০০৯); সাপ্তাহিক: সোনালী দিন (১৯৯২), মানবাধিকার সংবাদ (১৯৯৩), নওয়াপাড়া (১৯৯৫), বাংলালোক (১৯৯৬), বজ্রকলম (২০০৪), প্রাত্যহিকী (২০০৭), গণমানস (২০০৯); মাসিক: ঘুমন্তের ডাক (১৯৯৫), গ্রামের সংবাদ (২০০৪), ফটো রিপোর্ট; সাময়িকী, যশোর সাহিত্যিক সংসদ, অবার্চীন।  অবলুপ্ত: দৈনিক কল্যাণ (১৯৮৪), সাপ্তাহিক কপোতাক্ষ।
লোকসংস্কৃতি গ্রামাঞ্চলে জারি, ধুয়োভাব, বাউল, ফোলই গানের প্রচলন রয়েছে। স্থানীয় আদিবাসী বেদে, পোদ, কাওরা, বাগদি ও বুনো প্রভৃতি সম্প্রদায় পূজা ও বিয়ে উপলক্ষে বিভিন্ন লোকজ অনুষ্ঠান পালন করে।
দর্শনীয় স্থান যশোর সদর উপজেলার জেসগার্ডেন পার্ক, মনিহার সিনেমা হল, ইমামবাড়ি, কেশবপুরের ভরতের দেউল, খাঞ্জালির দীঘি, সাগরদাড়ি গ্রামের মধুপল্লী, মীর্জানগর হাম্মামখানা, অভয়নগরের খানজাহান আলী জামে মসজিদ, শ্রীধরপুর জমিদার বাড়ি, রূপসনাতন ধাম। 

শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭

যশোরের কবি ও সাহিত্যিকদের কথা 
শ্রী তারাপদ দাস
প্রবাহমান কাল থেকে যশোর সাহিত্যচর্চার পাদপীঠ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বৃটিশ শাসনকাল থেকে আজ পর্যন্ত বহু কবি-সাহিত্যিক এ জেলায় জন্মগ্রহণ করে, তাদের লেখায় সাহিত্য সম্ভার সমৃদ্ধ করেছেন। অধুনা যশোরের সাহিত্যচর্চা এবং কবি সাহিত্যিকদের বিবরণ দিতে গেলে বৃহত্তর যশোরের প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের কথা না বললে আধুনা যশোর অকৃতজ্ঞ বলে মনে হবে। তাই প্রথিতযশাঃ কতিপয় কবি-সাহিত্যিক, যারা তাদের সাহিত্যকর্ম দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে গৌরবময় করে তুলেছেন তাদের নাম ও ঠিকানা তুলে ধরছি মাত্র।
নড়াইল জেলায় কালিয়া উপজেলার গুরুনাথ সেনগুপ্ত, লোহাগড়া উপজেলার রায় বাহাদুর যদুনাথ মুজমদার, ডমুরিয়া গ্রামের কবিয়াল বিজয় সরকার, ঝিানাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মুন্সী মেহেরউল্লাহ, শৈলকুপা থানার কবি গোলাম মোস্তফা, মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার মোহাম্মদ গোলাম হোসেন, পার নান্দুয়াল গ্রামের ডাঃ লুৎফর রহমান, সাঝআইল গ্রামের কবি ফররুখ আহমদ, শালিখা থানার নিমাই ভট্রাচার্য এবং ঝিনাইদহ জেলার দুর্গাপুর গ্রামের জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী প্রমুখ আমাদের যশোরকে সম্মৃদ্ধ করে তুলেছেন।
এখন অধুনা যশোরের যে সমস্ত কবি-সাহিত্যিক প্রাচীনকাল থেকে সাহিত্য সৃষ্টিতে অবদান রেখে স্মরণীয় হয়েছেন আমি পর্যায়ক্রমে তাদের নাম ঠিকানা ও সৃষ্টির উল্লেখ করছি।
* মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দও (১৮২৪-১৮৭৩)। জন্মস্থান: কেশবপুর উপজেলার সাগরদাড়ি গ্রাম। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: মেঘনাদবধ (মহাকাব্য), বীরাঙ্গনা (কাব্য), ব্রজাঙ্গনা (কাব্য), তিলোত্তমা সম্ভব (কাব্য), মায়াকানন (নাটক), একেই কি বলে সভ্যতা (প্রহসন), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো (প্রহসন), চতুর্দশপদী কবিতা প্রভৃতি।
* মান কুমারী বসু (১৮৬৩-১৯৪৩)। জন্মস্থান: অভয়নগর উপজেলার শ্রীধরপুর গ্রাম। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: প্রিয় প্রথমা (কাব্য) কুসুমাঞ্জলি (কাব্য), বিভূতি (কাব্য) শুভ সাধনা (কাব্য) প্রভৃতি।
* হেমেন্দ্র প্রসাদ ঘোষ (১৮৭৬-১৯৩২) জন্মস্থান: চৌগাছা উপজেলা সদরে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: বিপতœীক (নাটক), অধঃপতন (নাটক), প্রেমের জয় (নাটক), নাগপাশা (উপন্যাস), অশ্র“ (উপন্যাস), মৃত্যুমিলন (উপন্যাস), প্রেম মরীচিকা (উপন্যাস), চোরাবালি (উপন্যাস), আষাঢ়ে গল্প (গ্রল্প গ্রন্থ)
* রায় বাহাদুর খগেন্দ্রনাথ মিত্র (১৮৮০-১৯১৯)। জন্মস্থান: অভয়নগর উপজেলার ধুলগ্রাম।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: নীলাম্বরী, কানেরদুল, কীর্তন গীতি।
* গোলাম লতিফ বিদ্যা বিনোদ (১৮৮৩-১৯৫২)। জন্মস্থান: সদর উপজেলার ঘোপগ্রাম। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: শিশুখুশী, নবীর কালাম, জাতীয় জীবন, পয়াগম্বর ও রসুল প্রভৃতি।
* কবি অবলা কান্ত মজুমদার (১৮৯১-১৯৫৮)। জন্মস্থান: মনিরাম উপজেলার বক্ষপুর গ্রাম। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: মধুগীতি কাব্য, মহাকবি মধুসূদন (নাটক), মহত্ব মন্দির (উপন্যাস), জীবন প্রদীপ (উপন্যাস), অমর শিখা (উপন্যাস) প্রভৃতি।
* আবুল হোসেন (১৮৯৬-১৯৩৮)। জন্মস্থান: ঝিকরগাছা উপজেলার কাউরিয়া গ্রাম।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: বাঞ্জালী মুসলমানের শিক্ষা সমস্যা, বাংলার নদী সমস্যা, নিজেদের বিড়ম্বনা প্রভৃতি।
* কবি তিলক শরৎ চন্দ্র মজুমদার (১৮৯৭-১৯৬০)। জন্ম্স্থান : মনিরামপুর উপজেলার পোড়াডাঙ্গা গ্রাম। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: পঞ্চকথা, পল্লব (কাব্য) আবর্ত (কাব্য) সুসময়ের ঘুম (উপন্যাস) স্বপ্নসাথী (কাব্য) সঞ্চারিনী (কাব্য)।
* কাজী মুজিবুর রহমান (১৮৯৮-১৯৬৭)। সদর উপজেলার দয়াপাড়া গ্রাম। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: বেদুইন, মোনক্ষুদা (কাব্য), শাহী আমল কাহিনী। উপন্যাস-শাহজাদা।
* মনোজবসু (১৯০১-) কেশবপুর থানার ডোঙ্গাঘাট গ্রাম। গ্রন্থাবলী : ভুলি নাই, সৈনিক, ওগো বধু সুন্দরী, বাঁশের কেল্লা, রক্তের বদলে রক্ত, সেতুবন্ধ, প্রেম নয়, ছবি আর ছবি প্রভৃতি।
* কাজী মৌলভী আবদুর রউফ (১৯০৪-১৯৭১)। কেশবপুর উপজেলার আন্দুলীয়া গ্রাম। কাব্য: অভ্রু সেতার, উপন্যাস: বাসার, পথের ডাক।
* ধীরাজ ভট্রাচার্য (১৯০৬-১৯৬২)। কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া গ্রাম। গদ্যগ্রন্থ : আমি যখন পুলিশ ছিলাম। আমি যখন নায়ক ছিলাম প্রভৃতি।
* ওয়াহেদ আলী আনসারী (১৯০৭-১৯৬২)। চৌগাছা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রাম। গ্রন্থ : নাস্তা, শেখ ফরিদ, ভিক্ষাবৃত্তি, কাব্য কোরান ইত্যাদি।
* অটল বিহারী দাস (১৯০৯-)। কেশবপুর উপজেলার কাকিলা খালি গ্রাম। কাব্যগ্রন্থ : অমরস্মৃতি, ঈশাখাঁ।
* মোঃ মতিউর রহমান (১৯১৪-)। বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া গ্রাম। গ্রন্থ : ইসলাম ঐতিহাসিক পর্যালোচনা।
* ডাঃ অজিত কুমার ঘোষ (১৯১৯-)। সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রাম। গ্রন্থ : বাংলা নাটকের ইতিহাস, জীবন শিল্পী শরৎ চন্দ্র, বঙ্গ সাহিত্যে হাস্য রসের ধারা প্রভৃতি।
* শাহাদত আলী আনসারী (১৯২০-২০০৩)। সদর উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। গ্রন্থ : শ্রী মতীর রণভঙ্গ, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও পরিবার পরিকল্পনা, মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ।
* গালিব হরমুজ (১৯২৬-)। সদর উপজেলার বুসন্দিয়া গ্রাম। গ্রন্থ : টুনির পিঠে, শিশুতোষ, বিস্মৃতির অতলে-৭১, মুক্তিযুদ্ধ, সুন্দরবনের আদিকথা, ভিন্ননাম ছড়া, ঐতিহাসিক যশোর, মুক্তিযুদ্ধের পল্লীচিত্র, সৃষ্টির অন্তরালে, কিংবদন্তীর মিলন মেলা প্রভৃতি।
* বেগম আয়েশা সরদার (১৯২৭-) বাঘারপাড়া, খানপুর গ্রাম। কাব্যগ্রন্থ: মায়ামুকুল।
* হামিদা রহমান (১৯২৭-) সদর উপজেলার পুরাতন কসবা। গ্রন্থ : শাহীমহল (ছোট গল্প), স্বাতী (কাব্য), মহাপ্রলয়ের স্বাক্ষর (গ্রন্থ)।
* গোলাম মাজেদ (১৯২৮-১৯৮৪) কেশবপুর উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রাম। কাব্যগ্রন্থ : আজব বাদ, ভাওতা, আহা জয় বাংলা, সপ্তক, ছোট গল্প -পার্থিব ইত্যাদি ।
* প্রমথ কুমার রায় (১৯২৯-) মনিরামপুর উপজেলার লখাইডাঙ্গা গ্রাম। গ্রন্থ : সর্ব ধর্ম সমন্বয়ে মুক্তির বাণী, রস মাহাতম।
* অধ্যাপক আজিজুল হক (১৯৩০-) স্থায়ী নিবাস যশোর শংকরপুর। কাব্য : ঝিনুক মুহূর্ত সূর্যকে, বিনষ্টের চিৎকার, অস্তিত্ব চেতনা, আমাদের কবিতা।
* তারাপদ দাস (১৯৩৭-) অভয়নগর উপজেলার মাগুরা গ্রাম। গল্পসংকলন : সভ্যতার অন্তরালে, কাব্য- প্রত্যয়, স্মৃতি যদি ইতিহাস (মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায়), সঙ্গীতমালা (গান)।
* জহুরুল ইসলাম (১৯৩০-) মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর গ্রাম। গ্রন্থ : উপন্যাস- নিমতলার ডাঙ্গা, পলিমাটির দেশে, নাটক-চাঁদের দেশে, কাব্য- জেল থেকে বেরিয়ে ট্রেন থেকে প্রিয়াকে।
* মোহাম্মদ শরীফ হোসেন (১৯৩৪-২০০৭) সদর উপজেলার খড়কী গ্রাম। গ্রন্থ : যশোর পৌরসভার প্রথম পঞ্চাশ বছর, যশোর পাবলিক লাইব্রেরী, রবীন্দ্রনামের বড়খবর
* কবি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামন (১৯৩৬) সদর উপজেলার খড়কী গ্রাম। কাব্যগ্রন্থ : অনির্বাণ, শংকিত আলোক, বিপন্ন বিষাদ, প্রতুনু প্রত্যাশা, ভালবাসার হাতে, ইচ্ছেমতি, সঙ্গীত: নির্বাচিত গান, প্রভৃতি
কালিপদ দাস (১৯৩৬-১৯৭৩), মেছুয়া বাজার, যশোর সদর। নাটক- বাস্তুহারা, চারশবিশ, জয়বাংলা, আনারকলি, সাথীহারা, তিতুমীর, সোনার বাংলা। ডিটেকটিভ- বাঘা সিরাজ প্রভৃতি।
* সাদেকা শফিউল্লাহ (১৯৩৬ – ২০০২), ঘোপ, যশোর। গ্রন্থ : নিষিদ্ধ সুখের যন্ত্রণা, মুগ্ধ অবশেষে, শর্তহীন নিঃশব্দে। শিশুদের জন্য- বাম্পার গোঁ গোঁ
* মনুয়ারা মহসিন (১৯৩৮) ঝিকরগাছা। নাটক-বকুল মালা, উপন্যাস-রক্ত পলাশ মন, সুখ এক ঝলক উড়ন্ত পাখী।
* আব্দুর রহিম আসাদী (১৯৪০) শার্শা উপজেলার খড়িখালী গ্রাম (বর্তমানে দলম ঘাটা গ্রাম (সদর)। কাব্য : এই আরন্যকে, দিবা লোকে নিরন্তর, মুখস্ত কবিতা, সূর্যের মানচিত্র। গ্রন্থ : আজন্ম লালিত, জলে জোছনায় এই মুখ প্রভৃতি।
* সালমা শহীদ চৌধুরী (১৯৪০) ঘোপ, সদর উপজেলা। গ্রন্থ : রন্ধন বিচিত্রা, খাদ্য পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা। নাটক – ফুলের বাগান।
* হোসেন উদ্দিন হোসেন (১৯৪৯), ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রাম। গ্রন্থ : যশোরাজ্য বাংলাদেশ, যশোর জেলার কিংবদস্তী, অমৃত বৈদেশিক উপন্যাস- নষ্ট- মানুষ, প্লাবন একজন প্রভৃত্তি।
* ডাঃ ফজল মোবারক  (১৯৪১-), অভয়নগর উপজেলার সিদ্দিপাশা গ্রাম। গ্রন্থ : আমার লাম্পট্য, দেবতার প্রেম,
আঙ্গিনায় কালো মেঘ, ইষ্টিকুটুম ছাটুম ছুটুম। গান- ঝংকার, স্পন্দন।
* এহসান চৌধুরী (১৯৪২-), ঘোপ, যশোর। উপন্যাস- অন্তিম প্রার্থনা, ফেরারীদিন। নাটক- নূপুরের মন, চেনা মিছিল, রক্তঝরার দিন। শিশুসাহিত্য- কাঠি মামার এ্যাডভেঞ্চার, কাঠিমামার নতুনখবর, কাঠিমামার কর্মকান্ড, চিড়িয়াখানার জীবযন্তু।
* মোঃ রফিকুজ্জামান (১৯৪৩), সদর উপজেলার সড়কী গ্রাম। চিত্রনাট্য- সোহাগ, ঘরসংসার, ছুটির ঘন্টা, জোকার, সুখে থাক, সানাই। কাব্য- কোথায় লুকাব মুখ, ভালবাসার সুখ-অসুখ।
* ডঃ সৈয়দ আকরাম হোসেন (১৯৪৪), বারান্দীপাড়া, যশোর। উপন্যাস- দেশকাল ও শিল্পরূপ, চেতনালোক ও শিল্পরূপ। (তিনি মূলত একজন সমালোচক)
* এ,এস, এম শামসুর রহমান (১৯৪৬) কেশবপুর উপজেলার বায়সাগ্রাম। গদ্যগ্রন্থ : চলারপথ, ব্যবসায়ে ইবাদত, মানুষের আদী পিতা আদম না বানর প্রভৃতি।
* অধীর কুমার দাস (১৯৩৫) অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ গ্রাম। কাব্য- ছন্দবীথিকা, বজ্রবীণা, প্রবন্ধ- এবং এখন আমরা, শতাব্দীর সফল প্রয়াস। গল্পগ্রস্থ : দু’মুঠো বকুল, সঙ্গীত সঙ্গীতা
* কংকর গুপ্ত (১৯৪৮-২০০৩) মনিরামপুর উপজেলার সুজাতপুর গ্রাম। নাটক- অগ্নিবীণার কবি, সুনীল আবাস, আমরা ক’জন, কোথাও অমৃত নেই, অভিশপ্ত মসনদ, শুভংকরের ফাঁকি।
* মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম (১৯৫৪), কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া গ্রাম। কাব্য- আমার সোনার হরিণ চাই। নাটক- প্রথম প্রতিশ্র“তি, ক্ষুধা, নিশি-মৃগয়া, সৈকতেসূর্য। উপন্যাস- পোড়ামাটি ভাঙ্গা ঘর, সূর্যবলয়।
* কুতুব উদ্দীন আমার (১৯৫৯) বেজপাড়া, যশোর। কাব্য-নবজীবন, উচিত কথা। মূলত তিনি ছড়াকার।
* কাজী শওকত শাহী (১৯৬০) নিউ টাউন, যশোর সদর উপজিলা। কাব্য সংকলন- কথা আর সুরে সুরে। প্রবন্ধ- শিক্ষালয়ের ইতিকথা।  (বিদ্যালয় ও কলেজের ইতিহাস)।
উল্লেখিত কবি, সাহিত্যিক ছাড়াও অনেক প্রবীন এবং তরুন কবি, সাহিত্যিক যশোরে প্রকাশিত সংবাদপত্র যথা দৈনিক গ্রামের কাগজ, দৈনিক স্পন্দন, দৈনিক লোকসমাজ প্রভৃতিতে কবিতা, গল্প, ছড়া ইত্যাদি প্রকাশ করে আসছেন, তাদের কারো কারো দু’একটি প্রকাশনাও রয়েছে।
কবি ও সাহিত্যিকদের সাহিত্যচর্চার জন্য প্রাচীন কাল থেকে বহু সংগঠন ও সাহিত্য কেন্দ্র যশোরে গড়ে উঠেছে। যে সমস্ত কেন্দ্রে সাহিতচর্চা হয় তার মধ্যে যশোর পাবলিক লাইব্রেরী অন্যতম। এখানে সাহিত্যচর্চার জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ আছে। পাকিস্তান আমলে প্রতি রবিবারে সাহিত্যের আসর বসত। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর শনিবারে সমাবেশ হয়। এই প্রবীন, নবীন কবি সাহিত্যিকবৃন্দ স্ব-ম্ব লেখা নিয়ে আসেন এবং পাঠ করেন। প্রতিমাসে এখানে থেকে “দূর্বা” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। প্রসঙ্গ ক্রমে বলা প্রয়োজন, প্রাক স্বাধীনতা কালে প্রয়াত কবি অবলাকান্ত মজুমদার নিজ বাড়ীতে ‘যশোর সাহিত্য সংঘ’ স্থাপন করে প্রতি রবিবারে সাহিত্যের আসর বসাতেন। তিনি নিয়মিত ভাবে মাসিক “শতদল” পত্রিকা প্রকাশ করতেন। অনুরূপ ভাবে মাহমুদুল হক তার ‘নতুন দেশ’ পত্রিকা অফিসে সাহিত্যের আসর বসাতেন এবং তার পত্রিকায় কবি সাহিত্যিকদের লেখা প্রকাশ করতেন। স্বাধীনতার পর তারাপদ দাস এবং শাহাদাত আলী আনসারীর যুক্ত প্রচেষ্টায় “বর্ণদীপ্ত সাহিত্য গোষ্ঠী” প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী অফিস ছিল লাল দীঘি পাড় জনাব মিজানুর রহমান সাহেবের বাড়ী। আহমদ রফিক সাহেব অনুরুপ ভাবে রবি বাসরীয় সাহিত্য পরিষদ গঠন করে সাহিতচর্চা করতেন এবং কবি সাহিত্যিকদের আসরে সাহিত্যচর্চার সুযোগ দিতেন।
যে সমস্ত সংগঠন কবি-সাহিত্যকদের সাহিত্যচর্চার পথ সুগম করে দিয়েছে তার মধ্যে যশোর সাহিত্য কেন্দ্র’ “শতাব্দী সাহিত্য গবেষনা পরিষদ, ভৈরব সাহিত্য চর্চা কেন্দ্র, বিদ্রোহী সাহিত্য পরিষদ, নজরুল সাহিত্য পরিষদ। এই সব সংস্থাগুলি যথাক্রমে চাঁদের হাট, আব্দুর রাজ্জাক কলেজ, ভূপতি মঞ্চ ও পৌরসভা ভবন (পরিত্যক্ত) কেন্দ্রে উপজেলার লাইব্রেরীতে এলাকার কবি সাহিত্যিক বৃন্দ সাপ্তাহিক, মাসিক আসর বসিয়ে সাহিত্যচর্চা করেন।
তরুন কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে যারা নিয়মিতভাবে সাহিত্যচর্চা করেন এবং গ্রন্থ প্রকাশ করছেন তার মধ্যে কবি স্বপন মোহাম্মদ কামাল, খসরু পারভেজ, রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন, এ জামান, ফখরে আলম, কাসেদুজ্জামান সেলিম, পদ্মনাভ অধিকারী, জি এম মুছা, তহীদ মনি, শাহনাজ পারভীন, শাহরিয়ার সোহেল, এস এম তোফাজ্জুল, সুভাষ বিশ্বাস প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। প্রবীন কবি ও সাহিত্যিদের মধ্যে মোঃ সামসুজ্জুমান, ফজলুল হক, আমিরুল ইসলাম রন্টু, আমিরুল আলম খান, প্রমুখ অনিমিত ভাবে লেখেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র ছাত্রী কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোট গল্প লিখে সাহিত্যের আসরে পাঠ করে এবং প্রবীনদের দ্বারা উৎসাহিত হয়।
তথ্য সংগ্রহ সহায়ক পুস্তক
বাংলা সাহিত্যে যশোরের অবদান
লেখক শাহাদত আলী আনসারী
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে যশোরের সম্পদ।
লেখক- এ, জামান।

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (২৫ জানুয়ারি১৮২৪ – ২৯ জুন১৮৭৩)

ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার। তাঁকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়।
ব্রিটিশ ভারতের যশোর জেলার এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশে জন্ম হলেও মধুসূদন যৌবনে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে মাইকেল মধুসূদন নাম গ্রহণ করেন এবং পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণবশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষার প্রতি। এই সময়েই তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্যরচনা করতে শুরু করেন।
মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্য১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলা প্রেসিডেন্সির যশোর জেলার (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার) সাগরদাঁড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারে মধুসূদন দত্তের জন্ম হয়। তিনি ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত ও তাঁর প্রথমা পত্নী জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান। রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের এক খ্যাতনামা উকিল। মধুসূদনের যখন তেরো বছর বয়স, সেই সময় থেকেই তাঁকে কলকাতায় বসবাস করতে হত। খিদিরপুর সার্কুলার গার্ডেন রিচ রোডে (বর্তমানে কার্ল মার্কস সরণী) অঞ্চলে তিনি এক বিরাট অট্টালিকা নির্মাণ করেছিলেন।