বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭

যশোর জেলা



যশোর জেলা (খুলনা বিভাগ)  আয়তন: ২৫৭০.৪২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৮´ থেকে ২৩°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫১´ থেকে ৮৯°৩৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ঝিনাইদহ এবং মাগুরা জেলা, দক্ষিণে সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলা, পূর্বে নড়াইল ও খুলনা জেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।
জনসংখ্যা: ২৪৭১৫৫৪; পুরুষ ১২৭৭৬৫০, মহিলা ১১৯৩৯০৪। মুসলিম ২১৭০৯৭৩, হিন্দু ২৯৩৮৪১, বৌদ্ধ ৫১১১, খ্রিস্টান ৭৯ এবং অন্যান্য ১৫৫০।
নদী: ভৈরব, চিত্রা, বেতনা, কপোতাক্ষ ও মুক্তেশ্বরী।
প্রশাসন যশোর জেলা গঠিত হয় ১৭৮১ সালে। জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে মনিরামপুর উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪৪৪.৭২ বর্গ কিমি) এবং জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা অভয়নগর (২৪৭.১৯ বর্গ কিমি)
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এ্যাডভোকেট মশিউর রহমান পাকসেনাদের হাতে বন্দী হন এবং পরে তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ২৭ মার্চ পাকসেনাদের গুলিতে অভয়নগরে নওয়াপাড়া রেলস্টেশনের অফিস কক্ষে রেলওয়ের কয়েকজন স্টাফ শহীদ হন। তাছাড়াও নওয়াপাড়া আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক নজিবর রহমানসহ আরও ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। যশোর সদর উপজেলায় ২৯ মার্চ ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন ও লে. আনোয়ার এর নেতৃত্বে যশোর সেনানিবাসের বাঙালি সৈনিকরা বিদ্রোহ করে বেরিয়ে আসার সময় সংঘর্ষে প্রায় ৩০০ সৈন্য শহীদ হন। ৩০ মার্চ যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া মোড়ে মুক্তিযোদ্ধারা ৫০ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। এপ্রিল মাসে পাকবাহিনী ঝিকরগাছার কৃষ্ণপুরে অসংখ্য লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৫ সেপ্টেম্বর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নের গোয়ালহাটি গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে সংঘটিত এক যুদ্ধে শহীদ হন। বাঘারপাড়ার দোহাকুলা গ্রামে সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকারদের এক লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৮ ডিসেম্বর বাঘারপাড়া উপজেলার সেকান্দারপুর গ্রামে রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং প্রায় ৩০ জন রাজাকার নিহত হয়। মনিরামপুরের মনোহর গ্রামে পাকবাহিনী ২৩ জন  নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শার্শা উপজেলার বেনাপোল সীমান্তের পূর্বে কাগজপুকুর এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে সংঘটিত লড়াইয়ে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাছাড়া পাকবাহিনী পার্শ্ববর্তী ৩টি গ্রাম ভস্মীভূত করে দেয়। ২০ নভেম্বর চৌগাছার জগন্নাথপুর ও গরীবপুর মাঠে পাকসেনা ও যৌথ বাহিনীর (মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধা) মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হয়। এ উপজেলাকে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রবেশদ্বার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ৭ ডিসেম্বর যশোর জেলা শত্রুমুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ৫, ভাস্কর্য ২, বধ্যভূমি ১, স্মৃতিসংগ্রহশালা ১। শার্শা উপজেলায় কাশিপুর গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সমাধি।
শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৫১.২৯%; পুরুষ ৫৬.১৫%, মহিলা ৪৬.০৯%। বিশ্ববিদ্যালয় কলজ ১, মেডিকেল কলেজ ১, আইন কলেজ ১, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১, কলেজ ৭৮, পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউশন ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫১৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৫৪, মাদ্রাসা ৩৫৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মাইকেল মধুসূদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (১৯৪১), নওয়াপাড়া কলেজ (১৯৬৪), যশোর সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৫), মনিরামপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৭), সরকারি সিটি কলেজ (১৯৬৭), শহীদ মশিউর রহমান আইন কলেজ (১৯৬৮), বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), চৌগাছা কলেজ (১৯৭২), নাভারণ ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), সম্মিলনী ইন্সটিটিউট (১৮৮৯), যশোর জিলা স্কুল (১৮৩৮), পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৯৭), মুনশী মেহেরুল্লাহ একাডেমি (১৯০১), বিদ্যানন্দকাটি রাসবিহারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০১), পি বি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০৩), নেহালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৭), মশিয়াহাটি বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় (১৯২০), কুলটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয (১৯২১), মধুসূদন তারা প্রসন্ন বালিকা বিদ্যালয় (১৯২৬), শাহবাজপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৭), চৌগাছা ছারা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯২৮), চৌগাছা কলেজ (১৯৭২), সা’দাত পাইলট স্কুল (১৯২৮), চৌগাছা ছারা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯২৮), কাশিপুর সিদ্দিকিয়া আলিম মাদ্রাসা (১৯০৮), নারায়ণপুর হাইস্কুল, চৌগাছা হাইস্কুল, বাঘারপাড়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯১০), বাঘারপাড়া সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২২), সৈয়দপুর সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯২২), চৌগাছা মাদ্রাসা (১৯৪০)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: পূরবী (১৯৮৪), দেশ হিতৈশী (১৯৯১), টেলিগ্রাম (১৯৯১), যশোর (১৯৯৩), লোক সমাজ (১৯৯৬), গ্রামের কাগজ (২০০১), স্পন্দন (২০০৬), রানার (২০০৯); সাপ্তাহিক: সোনালী দিন (১৯৯২), মানবাধিকার সংবাদ (১৯৯৩), নওয়াপাড়া (১৯৯৫), বাংলালোক (১৯৯৬), বজ্রকলম (২০০৪), প্রাত্যহিকী (২০০৭), গণমানস (২০০৯); মাসিক: ঘুমন্তের ডাক (১৯৯৫), গ্রামের সংবাদ (২০০৪), ফটো রিপোর্ট; সাময়িকী, যশোর সাহিত্যিক সংসদ, অবার্চীন।  অবলুপ্ত: দৈনিক কল্যাণ (১৯৮৪), সাপ্তাহিক কপোতাক্ষ।
লোকসংস্কৃতি গ্রামাঞ্চলে জারি, ধুয়োভাব, বাউল, ফোলই গানের প্রচলন রয়েছে। স্থানীয় আদিবাসী বেদে, পোদ, কাওরা, বাগদি ও বুনো প্রভৃতি সম্প্রদায় পূজা ও বিয়ে উপলক্ষে বিভিন্ন লোকজ অনুষ্ঠান পালন করে।
দর্শনীয় স্থান যশোর সদর উপজেলার জেসগার্ডেন পার্ক, মনিহার সিনেমা হল, ইমামবাড়ি, কেশবপুরের ভরতের দেউল, খাঞ্জালির দীঘি, সাগরদাড়ি গ্রামের মধুপল্লী, মীর্জানগর হাম্মামখানা, অভয়নগরের খানজাহান আলী জামে মসজিদ, শ্রীধরপুর জমিদার বাড়ি, রূপসনাতন ধাম। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন