বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৭

কেশবপুরের ভরতের দেউল – যশোর


কেশবপুর উপজেলা সদর হতে ১৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোন ভদ্রানদীর তীরে গৌরিঘোনা ইউনিয়নের ভরতভায়না গ্রামে ভরতের দেউল অবস্থিত। ১২.২০ মিটার উঁচু ২৬৬ মিটার পরিধি বিশিষ্ট দেউলটিকে একটি টিলার মত দেখায়। দেউলটি গুপ্ত যুগের খ্রিষ্টীয় ২য় শতকে নির্মিত হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। ১৯২৩ সালের ১০ জানুয়ারী তদানীন্তন সরকার এটাকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেউলের খনন কাজ চালাই। এর প্রথম অংশে আকারের স্থাপনা, দ্বিতীয় অংশে একটি মঞ্চ, তৃতীয় অংশে মূল মন্দির। খননের ফলে দেউলের ভিত থেকে চূড়া পর্যন্ত ৯৪টি কক্ষ দৃষ্ট হয়। স্থাপনাটির ৪ পার্শ্বে বর্ধিত আকারে ১২পিট কক্ষ। বাকী ৮২টি কক্ষ ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। দেউলটির চূড়ায় ৪পিট কক্ষ এবং পার্শ্বে ৮টি কক্ষ রয়েছে। স্থাপনাটির গোড়ার দিকে ৪ পার্শ্বে ৩ মিটার চওড়া রাস্তা রয়েছে। খনন কালের মধ্যে পোড়া মাটির তৈরী নারীর মুখমন্ডল, দেবদেবীর নৃত্যের দৃশ্য সম্বলিত টেরাকোটার ভগ্নাংশ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের এ যাবত প্রাপ্ত টেরাকোটার মধ্যে এটি বৃহৎ আকৃতির। তাছাড়া নকসা করার ইট, মাটির ডাবর, পোড়া মাটির গহনার মূর্তি পাওয়া গেছে। এ অঞ্চলে অন্য কোন পুরকীর্তিতে এত বড় আকারের ইট ব্যবহৃত হয়নি।
স্থানীয়দের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ভরতের দেউল, ভরত রাজার দেউল নামে পরিচিত। এ প্রত্নস্থানে খ্রিস্টিয় বিশ শতকের গোড়ার দিকে ১২ দশমিক ২২ মিটার উঁচু এবং ২৬৬ মিটার পরিধি বিশিষ্ট একটি ঢিবির অস্তিত্ব ছিল। ১৮৮৯ সালে বৃটিশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপারিন্টেন্ডেন্ট কাশিনাথ দীক্ষিত এ দেউল পরিদর্শনে এসে মন্তব্য করেন যে এটি ৫০ ফুটের অধিক উঁচু এবং ব্যাস ৯০০ ফুটেরও অধিক।নির্মাণে যে ইট ব্যবহার হয়েছে এতো বড় আকারের ইট এতদঞ্চলের অন্য কোনো পুরাকীর্তিতে ব্যবহার করা হয়নি।
১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে এ দেউলের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সাত অর্থ বছরের বরাদ্দ পেয়ে এ দেউলে খননের কাজ চালায়। খননের ফলে দেউলটির পূর্ণ অবয়ব মানুষের দৃষ্টিতে আসে।
খননে সমগ্র প্রাসাদটির ভিত থেকে শেষ পর্যন্ত মোট ৯৪টি কক্ষ পাওয়া যায়। চারপাশে ৪টি উইং ওয়াল। এর মধ্যে ১২টি কক্ষ। বাকি ৮২টি কক্ষের সমন্বয়ে এ বৌদ্ধ স্ত‍ুপটি তৈরি। স্তুপটির চূড়ায় ৪টি কক্ষ। এ কক্ষের দু’পাশে আরও ৮টি ছোট ছোট কক্ষ রয়েছে। অধিকাংশ কক্ষগুলো মাটি দ্বারা পরিপূর্ণ।

কীভাবে যাবেনঃ

ভরতের দেওল দেখতে হলে আপনি যেখানে থাকেন না কেন, আপনাকে প্রথমে খুলনার জেলার চুকনগরে আসতে হবে। সেখান থেকে ভ্যান, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান অথবা মোটরসাইকেলে করে আপনাকে ভরত ভায়না নামক স্থানে যেতে হবে।
সেখানে যাওয়ার পর যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলে দেবে ভরতের দেউল কোথায়। সৌন্দর্যের দিক থেকে কোনো কমতি নেই স্থাপনাটির।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ-যশোর


বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদরের চন্ডীকপুরস্থ মহেষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ৷ বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ এবং মা জেন্নাতুন্নেসা ৷ বাবা কৃষক ছিলেন ৷ জমিজিরাত যা ছিল তার উৎপন্ন ফসলেই চলে যেত সংসার৷ নূর মোহাম্মদ একমাত্র সন্তান হিসেবে পিতা-মাতার আদর-আহ্লাদে বড় হতে থাকলেন ৷ অতি আদর-যত্নের ফলে বুদ্ধি ও মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নূর মোহাম্মদের লেখা পড়া বেশিদূর এগোল না৷ গান-বাজনা, যাত্রা-থিয়েটারের মতো সাংস্কৃতিক কার্যকলাপেই তাঁর মন ছিল বেশি৷ খেলাধুলায়ও ছিলেন বেশ ভালো৷ দুরন্ত আর সাহসী হিসেবে গ্রামে নামও ছিল তাঁর৷ বাবা-মায়ের অগাধ ভালোবাসায় এভাবেই কাটছিল তাঁর বেড়ে ওঠার দিনগুলো ৷
কিন্তু কিশোর জীবনেই অনাথ হলেন নূর মোহাম্মদ শেখ৷ বাবা-মাকে হারিয়ে অকুলপাথারে ভেসে গেলেন তিনি৷ কী করবেন আর কী করবেন না ঠিক কিছুই বুঝতে পারছিলেন না৷ আশপাশে এমন কোনো অভিভাবকও ছিল না, যারা তাঁর সান্ত্বনার সঙ্গী হতে পারে৷ সমবয়সী বন্ধুরাই হয়ে উঠল তাঁর সুখ-দুঃখ-আনন্দের সাথী৷ তিনি মেতে উঠলেন গান-বাজনা নিয়ে৷ নিজের গানের গলাও ছিল ভালো৷ নূর মোহাম্মদ যাত্রাদল, জারি গান, বন্ধুবান্ধব ইত্যাদিতে টাকা খরচ করতে লাগলেন৷ কিন্তু টাকা কীভাবে আয় করতে হয় তা তিনি শেখেননি৷ তাই টাকার জন্য ধীরে ধীরে একটু একটু করে জমি বিক্রি করতে শুরু করলেন

সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ

১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে নূর মোহাম্মদ শেখ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ আমানত শেখ, মাতা জেন্নাতুন্নেসা। অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারান ফলে শৈশবেই ডানপিটে হয়ে পড়েন। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সপ্তম শ্রেণীর পর আর পড়াশোনা করেননি। নিজ গ্রামেরই সম্পন্ন কৃষক ঘরের মেয়ে তোতাল বিবিকে বিয়ে করেন। ১৯৫৯-এর ১৪ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর-এ যোগদান করেন। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই নূর মোহাম্মদকে দিনাজপুর থেকে যশোর সেক্টরে বদলি করা হয়। এরপর তিনি ল্যান্স নায়েক পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন।যুদ্ধ চলাকালীন যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা’র নেতৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।

যেভাবে শহীদ হলেনঃ

১৯৭১- এর ৫ সেপ্টেম্বর সুতিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষার সামনে যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে নূর মোহাম্মদকে অধিনায়ক করে পাঁচ জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্ট্যান্ডিং পেট্রোল পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হঠাৎ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পেট্রোলটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা থেকে পাল্টা গুলিবর্ষণ করা হয়। তবু পেট্রোলটি উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। এক সময়ে সিপাহী নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে নূর মোহাম্মদ নান্নু মিয়াকে কাঁধে তুলে নেন এবং হাতের এল.এম.জি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করলে শত্রুপক্ষ পশ্চাৎপসরণ করতে বাধ্য হয়। হঠাৎ করেই শত্রুর মর্টারের একটি গোলা এসে লাগে তাঁর ডান কাঁধে। ধরাশয়ী হওয়া মাত্র আহত নান্নু মিয়াকে বাঁচানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন। হাতের এল.এম.জি সিপাহী মোস্তফাকে দিয়ে নান্নু মিয়াকে নিয়ে যেতে বললেন এবং মোস্তফার রাইফেল চেয়ে নিলেন যতক্ষণ না তাঁরা নিরাপদ দূরুত্বে সরে যেতে সক্ষম হন ততক্ষণে ঐ রাইফেল দিয়ে শত্রুসৈন্য ঠেকিয়ে রাখবেন এবং শত্রুর মনোযোগ তাঁর দিকেই কেন্দ্রীভুত করে রাখবেন। অন্য সঙ্গীরা তাদের সাথে অনুরোধ করলেন যাওয়ার জন্যে। কিন্তু তাঁকে বহন করে নিয়ে যেতে গেলে সবাই মারা পড়বে এই আশঙ্কায় তিনি রণক্ষেত্র ত্যাগ করতে রাজি হলেন না। বাকিদের অধিনায়োকোচিত আদেশ দিলেন তাঁকে রেখে চলে যেতে। তাঁকে রেখে সন্তর্পণে সরে যেতে পারলেন বাকিরা। এদিকে সমানে গুলি ছুড়তে লাগলেন রক্তাক্ত নূর মোহাম্মদ। একদিকে পাকিস্তানী সশস্ত্রবাহিনী, সঙ্গে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্র, অন্যদিকে মাত্র অর্ধমৃত সৈনিক (ই.পি.আর.) সম্বল একটি রাইফেল ও সীমিত গুলি। এই অসম অবিশ্বাস্য যুদ্ধে তিনি শত্রুপক্ষের এমন ক্ষতিসাধন করেন যে তারা এই মৃত্যুপথযাত্রী যোদ্ধাকে বেয়নেট দিয়ে বিকৃত করে চোখ দুটো উপড়ে ফেলে। পরে প্রতিরক্ষার সৈনিকরা এসে পাশের একটি ঝাড় থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে। এই বীরসেনানীকে পরবর্তীতে যশোরের কাশিপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়।

বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭





যশোর জেলা



যশোর জেলা (খুলনা বিভাগ)  আয়তন: ২৫৭০.৪২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৮´ থেকে ২৩°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫১´ থেকে ৮৯°৩৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ঝিনাইদহ এবং মাগুরা জেলা, দক্ষিণে সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলা, পূর্বে নড়াইল ও খুলনা জেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।
জনসংখ্যা: ২৪৭১৫৫৪; পুরুষ ১২৭৭৬৫০, মহিলা ১১৯৩৯০৪। মুসলিম ২১৭০৯৭৩, হিন্দু ২৯৩৮৪১, বৌদ্ধ ৫১১১, খ্রিস্টান ৭৯ এবং অন্যান্য ১৫৫০।
নদী: ভৈরব, চিত্রা, বেতনা, কপোতাক্ষ ও মুক্তেশ্বরী।
প্রশাসন যশোর জেলা গঠিত হয় ১৭৮১ সালে। জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে মনিরামপুর উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪৪৪.৭২ বর্গ কিমি) এবং জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা অভয়নগর (২৪৭.১৯ বর্গ কিমি)
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এ্যাডভোকেট মশিউর রহমান পাকসেনাদের হাতে বন্দী হন এবং পরে তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ২৭ মার্চ পাকসেনাদের গুলিতে অভয়নগরে নওয়াপাড়া রেলস্টেশনের অফিস কক্ষে রেলওয়ের কয়েকজন স্টাফ শহীদ হন। তাছাড়াও নওয়াপাড়া আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক নজিবর রহমানসহ আরও ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। যশোর সদর উপজেলায় ২৯ মার্চ ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন ও লে. আনোয়ার এর নেতৃত্বে যশোর সেনানিবাসের বাঙালি সৈনিকরা বিদ্রোহ করে বেরিয়ে আসার সময় সংঘর্ষে প্রায় ৩০০ সৈন্য শহীদ হন। ৩০ মার্চ যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া মোড়ে মুক্তিযোদ্ধারা ৫০ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। এপ্রিল মাসে পাকবাহিনী ঝিকরগাছার কৃষ্ণপুরে অসংখ্য লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৫ সেপ্টেম্বর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নের গোয়ালহাটি গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে সংঘটিত এক যুদ্ধে শহীদ হন। বাঘারপাড়ার দোহাকুলা গ্রামে সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকারদের এক লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৮ ডিসেম্বর বাঘারপাড়া উপজেলার সেকান্দারপুর গ্রামে রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং প্রায় ৩০ জন রাজাকার নিহত হয়। মনিরামপুরের মনোহর গ্রামে পাকবাহিনী ২৩ জন  নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শার্শা উপজেলার বেনাপোল সীমান্তের পূর্বে কাগজপুকুর এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে সংঘটিত লড়াইয়ে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাছাড়া পাকবাহিনী পার্শ্ববর্তী ৩টি গ্রাম ভস্মীভূত করে দেয়। ২০ নভেম্বর চৌগাছার জগন্নাথপুর ও গরীবপুর মাঠে পাকসেনা ও যৌথ বাহিনীর (মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধা) মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হয়। এ উপজেলাকে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রবেশদ্বার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ৭ ডিসেম্বর যশোর জেলা শত্রুমুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ৫, ভাস্কর্য ২, বধ্যভূমি ১, স্মৃতিসংগ্রহশালা ১। শার্শা উপজেলায় কাশিপুর গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সমাধি।
শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৫১.২৯%; পুরুষ ৫৬.১৫%, মহিলা ৪৬.০৯%। বিশ্ববিদ্যালয় কলজ ১, মেডিকেল কলেজ ১, আইন কলেজ ১, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১, কলেজ ৭৮, পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউশন ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫১৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৫৪, মাদ্রাসা ৩৫৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মাইকেল মধুসূদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (১৯৪১), নওয়াপাড়া কলেজ (১৯৬৪), যশোর সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৫), মনিরামপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৭), সরকারি সিটি কলেজ (১৯৬৭), শহীদ মশিউর রহমান আইন কলেজ (১৯৬৮), বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), চৌগাছা কলেজ (১৯৭২), নাভারণ ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), সম্মিলনী ইন্সটিটিউট (১৮৮৯), যশোর জিলা স্কুল (১৮৩৮), পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৯৭), মুনশী মেহেরুল্লাহ একাডেমি (১৯০১), বিদ্যানন্দকাটি রাসবিহারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০১), পি বি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০৩), নেহালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৭), মশিয়াহাটি বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় (১৯২০), কুলটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয (১৯২১), মধুসূদন তারা প্রসন্ন বালিকা বিদ্যালয় (১৯২৬), শাহবাজপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৭), চৌগাছা ছারা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯২৮), চৌগাছা কলেজ (১৯৭২), সা’দাত পাইলট স্কুল (১৯২৮), চৌগাছা ছারা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯২৮), কাশিপুর সিদ্দিকিয়া আলিম মাদ্রাসা (১৯০৮), নারায়ণপুর হাইস্কুল, চৌগাছা হাইস্কুল, বাঘারপাড়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯১০), বাঘারপাড়া সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২২), সৈয়দপুর সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯২২), চৌগাছা মাদ্রাসা (১৯৪০)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: পূরবী (১৯৮৪), দেশ হিতৈশী (১৯৯১), টেলিগ্রাম (১৯৯১), যশোর (১৯৯৩), লোক সমাজ (১৯৯৬), গ্রামের কাগজ (২০০১), স্পন্দন (২০০৬), রানার (২০০৯); সাপ্তাহিক: সোনালী দিন (১৯৯২), মানবাধিকার সংবাদ (১৯৯৩), নওয়াপাড়া (১৯৯৫), বাংলালোক (১৯৯৬), বজ্রকলম (২০০৪), প্রাত্যহিকী (২০০৭), গণমানস (২০০৯); মাসিক: ঘুমন্তের ডাক (১৯৯৫), গ্রামের সংবাদ (২০০৪), ফটো রিপোর্ট; সাময়িকী, যশোর সাহিত্যিক সংসদ, অবার্চীন।  অবলুপ্ত: দৈনিক কল্যাণ (১৯৮৪), সাপ্তাহিক কপোতাক্ষ।
লোকসংস্কৃতি গ্রামাঞ্চলে জারি, ধুয়োভাব, বাউল, ফোলই গানের প্রচলন রয়েছে। স্থানীয় আদিবাসী বেদে, পোদ, কাওরা, বাগদি ও বুনো প্রভৃতি সম্প্রদায় পূজা ও বিয়ে উপলক্ষে বিভিন্ন লোকজ অনুষ্ঠান পালন করে।
দর্শনীয় স্থান যশোর সদর উপজেলার জেসগার্ডেন পার্ক, মনিহার সিনেমা হল, ইমামবাড়ি, কেশবপুরের ভরতের দেউল, খাঞ্জালির দীঘি, সাগরদাড়ি গ্রামের মধুপল্লী, মীর্জানগর হাম্মামখানা, অভয়নগরের খানজাহান আলী জামে মসজিদ, শ্রীধরপুর জমিদার বাড়ি, রূপসনাতন ধাম।